ওহমের সূত্র বিবৃত, ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ।

১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী সাইমন ওহম বর্তনীর তড়িৎ পরিবহনের একটি গানিতিক বিবৃতি প্রদান করেন, যাকে ওহমের সূত্র বলা হয়। সূত্রটি একটি পরিবাহীর প্রান্তদ্বয়ের বিভব পার্থক্য, তড়িৎ প্রবাহ মাত্রা ও উক্ত পরিবাহীর রোধ বা রেজিস্ট্যান্স এর মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।

সূত্রটি হলো:
কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অর্থাৎ তাপমাত্রা যদি অপরিবর্তিত থাকে কোন একটি পরিবাহীর দুটি প্রান্তের বিভব পার্থক্য উক্ত পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে তড়িৎ প্রবাহ চলে তার সমানুপাতিক।

তাপমাত্রা অপবর্তিত থাকলে কোন পরিবাহীর বিদ্যুৎ প্রবাহের মান উক্ত পরিবাহীর প্রান্ত দুটির বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক ভাবে পরিবর্তিত হবে। বিভব পার্থক্য যদি অর্ধেক করা হয় তাহলে বিদ্যুৎ প্রবাহ অর্ধেক হবে। আবার বিভব পার্থক্য দ্বিগুণ করা হলে বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বিগুণ হবে।

{tocify} $title={Table of Contents}

ওহমের সূত্র বিবৃত, ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ।

ব্যাখ্যা: মনে করি, AB পরিবাহী তার দিয়ে A বিন্দু থেকে B বিন্দুর দিকে তড়িৎ প্রবাহ চলছে। A ও B বিন্দুর বিভব পার্থক্য হলো V । ধরা যাক, তাপমাত্রা অপরিবর্তিত রয়েছে। তারটির মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ I হলে, ওহমের সূত্র অনুসারে, 
I ∝ V
বা I=GV
এখানে, G সমানুপাতিক ধ্রুবক হলো পরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহিতা। কোন পরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহিতা এর রোধ এর বিপরীত রাশি।

অর্থাৎ তড়িৎ পরিবাহিতা =1/রোধ
বা, G=1/R
সুতরাং, I=(1/R)×V
বা, I=V/R
বা, V=IR

পরিবাহিতার সংজ্ঞা ও একক

পরিবাহিতার একক হলো সিমেন্স (Siemens), যাকে S দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
একটি পরিবাহীর প্রান্ত দুটির বিভব পার্থক্য 1V হলে যদি উক্ত পরিবাহীর মধ্য দিয়ে 1A বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে তাহলে তার পরিবাহিতাকে 1S বলা হয়। অর্থাৎ 1S = 1A/1V

ওহমের সূত্রের প্রয়োগ

ওহমের সূত্রটি বিভব পার্থক্য, রোধ ও তড়িৎ প্রবাহের মধ্যে একটি সম্পর্ক নির্দেশ করে। ওহমের সূত্রের সাহায্যে কোন সার্কিটের তড়িৎ সংশ্লিষ্ট বিষয় গুলো বিশ্লেষণ করা যায়।

বিভব পার্থক্য নির্ণয়

ওহমের V=IR সূত্রটি ব্যবহার করে বিভব পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। এখানে V হচ্ছে পরিবাহীর প্রান্তদ্বয়ের মধ্যে বিভব পার্থক্য যা নির্ণয় করতে হবে। I হচ্ছে উক্ত পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ এবং R হচ্ছে এর রোধ। কোন পরিবাহীর রোধ ও তড়িৎ প্রবাহ গুণ করলে তার দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য পাওয়া যায়।

রোধ নির্ণয়

ধরা যাক, V হলো কোন পরিবাহী তারের প্রান্তদ্বয়ের বিভব পার্থক্য, R হলো এর রোধ এবং I তড়িৎ প্রবাহ। তাহলে, রোধ নির্ণয়ের ওহমের সূত্রটি হবে R=V/I অর্থাৎ কোন পরিবাহীর প্রান্তদ্বয়ের বিভব পার্থক্যকে এর তড়িৎ প্রবাহ দিয়ে ভাগ করলে রোধ পাওয়া যাবে।

তড়িৎ প্রবাহ নির্ণয়

ওহমের সূত্র মতে, কোন একটি পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ নির্ণয় করতে উক্ত পরিবাহীর প্রান্ত দুটির বিভব পার্থক্যকে পরিবাহীর রোধ দিয়ে ভাগ করতে হবে। অর্থাৎ I=V/R যেখানে, I হচ্ছে পরিবাহীটির তড়িৎ প্রবাহের মান যা নির্ণয় করতে হবে। R হচ্ছে রোধ এবং V বিভব পার্থক্য।

ওহমের সূত্র মনে রাখার সহজ কৌশল

ওহমের সূত্র মনে রাখার একটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে তড়িৎ প্রবাহ, রোধ নির্ণয় ও বিভব পার্থক্য নির্ণয় করার সূত্র তিনটিকে সহজে মনে রাখা যায়। আশা করি, সূত্রগুলো মনে রাখার ঝামেলা এড়াতে এই কৌশল ভালো কাজ দিবে।

ওহমের সূত্র মনে রাখার সহজ কৌশল

একটি ত্রিভুজকে তিনটি অংশে ভাগ করে উপরের অংশে বিভব পার্থক্য V, নিচের বাম অংশে তড়িৎ প্রবাহ I এবং নিচের ডানদিকের অংশে রোধ R রাখা হয়েছে। বিভব পার্থক্য বা ভোল্টেজ (V) নির্ণয় করার জন্য V কে বাদ দিলে I ও R অবশিষ্ট থাকবে। মনে রাখবেন, পাশাপাশি থাকলে গুণ হবে এবং উপর নিচে ভাগ হবে। তাহলে V=IR হবে, I ও R পাশাপাশি থাকার কারণে।


তড়িৎ প্রবাহ (I) নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, I কে বাদ দিলে উপরে V এবং নিচে R বাকি থাকবে। যেহেতু V উপরে এবং R নিচে তাই V ভাগ R হবে অর্থাৎ I=V/R হবে। আবার রোধ (R) বাদ দিলে উপরে V এবং নিচে I থাকে তাই রোধ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে R= V/I হবে।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post