পরাগায়ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়। পরাগ সংযোগ বা পরাগায়ন একই কথা। ফুলের পরাগধানীতে থাকে পরাগরেণু, এই পরাগরেণু যখন একই ফুলের গর্ভমুন্ডে অথবা একই জাতীয় অন্য ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হলে তাকে পরাগায়ন বলে।
{tocify} $title={Table of Contents}
পরাগায়নের প্রকারভেদ
পরাগায়ন দুই ধরনের। ১. স্ব- পরাগায়ন ২.পর-পরাগায়ন।
স্ব- পরাগায়নঃ স্ব- পরাগায়ন ঘটে একই ফুলে কিংবা একই গাছের দুটি ফুলের মধ্যে। অর্থাৎ একই ফুলে অথবা একই গাছের ভিন্ন ভিন্ন দুটি ফুলের পরাগায়নকে স্ব- পরাগায়ন বলে। উদাহরণঃ ধুতুরা, সরিষা প্রভৃতি উদ্ভিদে স্ব- পরাগায়ন ঘটতে দেখা যায়। স্ব- পরাগায়নের বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। যেমনঃ
- পরাগায়নের জন্য বাহকের উপর নির্ভরশীল হবার প্রয়োজন নেই।
- নিশ্চিত পরাগায়ন
- পরাগরেণুর অপচয় খুব কম।
- উৎপন্ন নতুন উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকে।
- স্ব- পরাগায়নের ফলে কোন প্রজাতির চরিত্রগত বিশুদ্ধতা অক্ষুন্ন থাকে।
- স্ব- পরাগায়নের ফলে উৎপন্ন বীজ থেকে জন্মানো নতুন গাছের অভিযোজন ক্ষমতা কম হয়।
পর-পরাগায়নঃ পরাগায়ন যখন একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে ঘটিত হয় তখন তাকে পর-পরাগায়ন বলে। উদাহরণঃ পেঁপে, শিমুল ইত্যাদি উদ্ভিদের ফুলে পর-পরাগায়ন হয়। এক্ষেত্রে পরাগরেণু কোন মাধ্যম বা বাহক দ্বারা একই প্রজাতির অন্য গাছের ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হয়।
প্রজাতি এক হলেও পর-পরাগায়ন ঘটে দুটি আলাদা গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদের মধ্যে। ফলে নতুন চরিত্র সম্পন্ন বীজ এবং এই বীজ থেকে যে উদ্ভিদ জন্মায় সেটা নতুন গুণসম্পন্ন হয়। পর-পরাগায়ন বাহকের উপর নির্ভর করে তাই পরাগায়নের নিশ্চয়তা থাকে না। পরাগরেণুর প্রচুর অপচয় হয়, ফলে প্রজাতির বিশুদ্ধতা বজায় থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বীজের অংকুরোদগম হার বেড়ে যায় এবং জীবনীশক্তির উন্নতি ঘটে পর-পরাগায়নের ফলে।
পরাগায়নের মাধ্যম
পরাগায়নের জন্য ফুলের পরাগরেণু গর্ভমুন্ডে স্থানান্তর প্রয়োজন। এই কাজটি কোন না কোন মাধ্যম করে থাকে। বায়ু, মাটি, পানি, পাখি, বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, মানুষ ইত্যাদি পরাগায়নের মাধ্যমের ভূমিকা পালন করে। পরাগরেণু যে মাধ্যমের সাহায্যে ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরিত হয় তাকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে।
মধু সংগ্রহের জন্য অথবা ফুলের সুন্দর রঙ কর্তৃক আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছি, কীটপতঙ্গ ও বিভিন্ন প্রাণী ফুল থেকে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় ফুলের পরাগ এদের শরীরে লেগে থাকে। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর কারণে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে পরাগ স্থানান্তরিত হয়। এভাবে এই প্রাণীগুলো পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
ফুলের গঠনগত ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম পরাগায়নে অংশগ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যেমনঃ পতঙ্গপরাগী ফুলগুলো পরাগায়নের জন্য পতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। এরা সাধারণত আকারে বড়, পরাগরেণু ও গর্ভমুন্ডে সুগন্ধ থাকে ও আঠালো। এরা রঙিন ও মধু গ্রন্থি যুক্ত হওয়ায় সহজেই কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করতে পারে, যেমনঃ জবা ফুল।
আরো পড়ুন ওহমের সূত্র বিবৃত, ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ।
বায়ুপরাগী ফুল খুব হালকা তাই বাতাসে ভেসে স্থান পরিবর্তন করে। এদের মধু গ্রন্থি নেই, পরাগ রেণু সংগ্রহ করতে এদের গর্ভমুন্ড আঠালো ও শাখান্বিত হয়, যেমনঃ ধান।
পানিপরাগী ফুল হালকা ও আকারে ছোট হওয়ায় সহজেই পানিতে ভেসে থাকে। এসব ফুলের পুরুষ ফুলের বৃন্ত ছোট ও স্ত্রী ফুলের বৃন্ত লম্বা থাকে, ফুলে কোন গন্ধ নাই। পরিণত অবস্থায় পুরুষ ফুল বৃন্ত থেকে আলাদা হয়ে পানিতে ভাসতে থাকে এবং স্ত্রী ফুলের সংস্পর্শে এলে পরাগায়ন হয়, যেমনঃ পাতা শেওলা। প্রাণী পরাগী ফুলগুলো গন্ধ যুক্ত অথবা গন্ধ বিহীন হতে পারে। এরা আকর্ষণীয় ও আকারে বড়। আকারে ছোট হলে পুষ্পমঞ্জরিতে সজ্জিত থাকে, যেমনঃ শিমুল।
পরাগায়নের গুরুত্ব
পরাগায়ন সপুষ্পক উদ্ভিদের জীবনচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । এটি সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন প্রজনন প্রক্রিয়ার একটি অংশ।
একটি উদ্ভিদের ফুল থেকে ফল ও বীজ উৎপন্ন হতে পরাগায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফল আমাদের খাদ্যের চাহিদা মেটায়, দেহের পুষ্টি ও শক্তির যোগান দেয়। বীজ থেকে নতুন গাছ হয় ফলে উদ্ভিদের বংশবিস্তার ঘটে, বংশ বিলুপ্ত হয় না।
পরাগায়ন না হলে অনেক উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যেত ফলে প্রাণীজগতে খাদ্য সংকট দিত। নিষেক সম্পূর্ণ করতে পরাগায়নের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। পরাগায়নের ফলে পৃথিবীতে নতুন প্রজাতির উদ্ভিদের আগমন ঘটে, অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
উদ্ভিদের বৈচিত্র্যপূর্ণতায় পরাগায়নের ভূমিকা রয়েছে। একই গোত্র অথবা প্রজাতির উদ্ভিদে পরাগায়নের বেলায় ভিন্ন ভিন্ন পরাগরেণু স্থানান্তরের কারনে নতুন নতুন বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়।
জীববিজ্ঞান, মাধ্যমিক/নবম ও দশম শ্রেণী, অধ্যায় একাদশ-জীবের প্রজনন (Reproduction)